Header Ads

মাশরাফি বিন মর্তুজার বানী পর্ব -২

“ বীর হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আরে ভাই, তারা জীবন দিয়েছেন। জীবন যাবে জেনেই ফ্রন্টে গেছেন দেশের জন্য। আমরা কি করি? খুব বাজে ভাবে বলি--টাকা নেই, পারফর্ম করি। একটা অভিনেতা, গায়কের মতো পারফর্মিং আর্ট করি। এর চেয়ে এক ইঞ্চি বেশিও না। মুক্তিযোদ্ধারা গুলির সামনে এইজন্য দাঁড়ায় নাই যে জিতলে টাকা পাবে। কাদের সঙ্গে কাদের তুলনা রে! ক্রিকেটে বীর কেউ থেকে থাকলে রকিবুল হাসান, শহীদ জুয়েলরা ”


“ রকিবুল ভাই ব্যাটে জয় বাংলা লিখে খেলতে নেমেছিলেন, অনেক বড় কাজ। তার চেয়েও বড় কাজ, বাবার বন্দুক নিয়ে ফ্রন্টে চলে গিয়েছিলেন। শহীদ জুয়েল ক্রিকেট রেখে ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দিয়েছিলেন। এটাই হলো বীরত্ব। ফাস্ট বোলিং সামলানার মধ্যে রোমান্টিসিজম আছে, ডিউটি আছে। বীরত্ব নেই ”


“ আমি বলি, এই যারা ক্রিকেটে দেশপ্রেম দেশপ্রেম বলে চিৎকার করে, এরা সবাই যদি একদিন রাস্তায় কলার খোসা ফেলা বন্ধ করত, একটা দিন রাস্তায় থুথু না ফেলত বা একটা দিন ট্রাফিক আইন মানত, দেশ বদলে যেত। এই প্রবল এনার্জি ক্রিকেটের পেছনে ব্যয না করে নিজের কাজটা যদি সততার সঙ্গে একটা দিনও সবাই মানে, সেটাই হয় দেশপ্রেম দেখানো। আমি তো এই মানুষদের দেশপ্রেমের সংজ্ঞাটাই বুঝি না ”


“ কিছু হলেই আমরা বলি, এই ১১ জন ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। আন্দাজে! তিন কোটি লোকও হয়ত খেলা দেখেন না। দেখলেও তাদের জীবন-মরণ খেলায় না। মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন রাজনীতিবিদেরা, তাদের স্বপ্ন ভবিষ্যত অন্য জায়গায়। এই ১১ জন মানুষের ওপর দেশের মানুষের ক্ষুধা, বেঁচে থাকা নির্ভর করে না। দেশের মানুষকে তাকিয়ে থকতে হবে একজন বিজ্ঞানী, একজন শিক্ষাবিদের দিকে ”


“ ব্যাটসম্যানরা শট খেলবেই কিন্তু আপনি যদি তাদেরকে স্ট্রাইক রোটেট করতে না দেন তাহলে সেটি তাদের মধ্যে একটি চাপ তৈরী করবে। যখন তারা স্ট্রইক রোটেট করতে পারবে না তখন তারা বাধ্য হবে রিস্কি শট খেলতে। তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি ব্যাটসম্যানদের একধাপ উপরে চিন্তা করতে ”


“ আজ কিছু কথা পরিষ্কার করে বলি। আমরা সবাইকে বিনোদন দেই। আমরা প্রকৃতঅর্থে বীর নই। আমাদের সত্যিকার বীর হচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আমরা দেশের জন্য কোন কিছু বিসর্জন দিই নি, মুক্তিযোদ্ধারা দিয়েছেন। আমাকে ভূল বুঝবেননা—ক্রিকেট কিন্তু জীবনের সবকিছু নয়। আমরা শুধুমাত্র চেষ্টা করি আমাদের দেশের মানুষকে খুশী করতে ”


“ আমি আপনাকে এখন বলতে পারি তামিম একদিন ১০,০০০ রান করবে, সাকিব করবে ১০,০০০ রান, সাথে থাকবে ৪০০ উইকেট, মুস্তাফিজের থাকবে ৪০০ উইকেট এবং সৌম্যের ১০,০০০ রান। বাংলাদেশ সামনের দশ বছরে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক আন্তর্জাতিক মানের প্লেয়ার বের করবে, যদি না টাকার মোহযুক্ত টি টুয়েন্টি লিগগুলো সবাইকে আচ্ছন্ন না করে ”


“ আমি জানি না আমি কতদিন এইদলের সাথে আমার খেলা চালিয়ে যেতে পারবো। তবে আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি—যখন আমি বুঝতে পারবো আমার দক্ষতা এবং ইচ্ছাশক্তি কমে আসছে, তখন আমি নিজে থেকেই সরে যাবো ”


“ আমরা নয় থেকে আটে এসেছি এবং পরে আট থেকে সাতে উঠেছি এবং আমরা আরও উপরে উঠতে পারি। অন্ততপক্ষে আমাদের উচিৎ এই স্থানটি ঠিকভাবে ধরে রেখে সঠিক সময়ে আরও এগিয়ে যাওয়া। ক্রিকেট উত্থান পতনের খেলা, কিন্তু মূল জিনিষটি হচ্ছে ধৈর্যের সাথে আপনার নিজের জায়গাটি ধরে রাখা ”


“ কেউ যদি সত্যিকার অর্থে খেলা বোঝে তাহলে অবশ্যই তারা স্বীকার করবে গত কয়েক মাসে আমরা অসাধারণ কিছু সময় পার করেছি। এবং আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় একটি অর্জন, বিশেষ করে ২০১৫ সালটি। আমাদের কাছে—একদিনের ক্রিকেট, গত আট মাস ছিলো একটি স্বপ্নের মত, আমরাই এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছি ”


“ সবাই হয়তোবা নাসির কে অকেশনাল বোলার মনে করে। আমি সবসময়ই বলি আমার টিমে 'অন অব দ্যা বেস্ট অফ স্পিনার' হলো নাসির, বিশেষ করে ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল এর জন্য। আমার হাতে একটাই অস্ত্র হলো নাসির। আমি সবসময়ই চেয়েছি নাসিরকে দিয়ে ১০ ওভার বোলিং করাতে ”


“ আমি আগেই বলেছিলাম---আমরা যদি বিশ্বকাপে ভালো করতে পারি তাহলে এটি আমাদের পরবর্তী সিরিজগুলো খেলতে সাহায্য করবে, কিন্তু আমি নিজেও ভাবিনি এটি আমাদের এতদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে ”


“ আমি কখনোই আমার জীবনে কোন কিছুর জন্য পরিকল্পনা করিনি—পরীক্ষার জন্যও না, অথবা কোন অনুষ্ঠানের কাপড় কেনার জন্যও না। আমি সবসময় শেষ মুহুর্তে যেটি সঠিক বলে মনে হয়েছে সেটি করেছি। তাই যখন আমি দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেলাম তখন আমি সবসময় যেটি করতাম সেটিই করেছি। আমি সাফল্য, ব্যার্থতা, ভবিষ্যৎ অথবা অতিতের জন্য কখনোই চিন্তা করিনি। এগুলো নিয়ে আমি কখনোই ভাবিনি ”

No comments

Theme images by Matt Vince. Powered by Blogger.