Header Ads

জুতো না পরা ১৭ বছর

দেবব্রত মুখোপাধ্যায়: নতুন জুতো কেনার পর দোকানী বললেন, ‘প্রথম প্রথম পায়ে ফোসকা পড়তে পারে। সাতদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।’

খরিদ্দার জুতো জোড়া বাসায় এনে সাত দিন তুলে রাখলেন। সাতদিন পর পায়ে দিয়ে আসা করলেন, আর ফোসকা পড়বে না। কারণ, জুতোর বয়স তো সাত দিন হয়ে গেছে।

আমাদের সাথে ওই খরিদ্দারের খুব একটা পার্থক্য নেই।

আমরাও তো বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস ১৭ বছর হয়ে গেলো বলে অনেক কিছু আশা করি। ইংল্যান্ডকে ৩ দিনে ম্যাচ হারিয়েও আমরা তৃপ্ত হই না। আমরা আশা করি, দুটো ম্যাচেই জয়। আমরা আশা করি, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কেবল একটু ঝলক দেখালে চলবে না; ম্যাচ জিতে আসতে হবে। আমরা আশা করি এই সময়ে এই পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দল ভারতকে সেখানে গিয়ে হারিয়ে আসবো।

কারণ, টেস্টে আমাদের বয়স যে ১৭ হতে চললো।

ভাই, ওই জুতোর মতোই ব্যাপার। পায়ে না দিয়ে এক সপ্তাহের জায়গায় এক বছর পরও পায়ে দিলে ফোসকা উঠবেই। আর টেস্ট স্ট্যাটাসও পেয়ে সেটাকে বাক্সে তুলে রাখলে ১৭ বছর নয়, ১৭০ বছর পরও এই ‘লড়াই করার তৃপ্তি’ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

বলুন তো, এই ১৭ বছরে বাংলাদেশ কয়টা টেস্ট খেলেছে?

৯৮টা। বছরে ৬টারও কম। এই খেলে আপনি আশা করেন যে, বাংলাদেশ ভারতের মতো দলের সাথে টক্কর দেবে? বাদ দেন, টেস্ট খেলা তো আমাদের হাতে সবসময় থাকে


না। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির চাপ থাকে, বড় দলগুলো শিডিউল দিতে চায় না। কিন্তু আমাদের ‘এ’ দলটাকে লংগার ভার্শন ক্রিকেটে বিভিন্ন দেশে সফরের ভেতরে রাখাটা তো আমরা করতে পারি।

বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা কতোদিন পর দেশের বাইরে টেস্ট খেলছে?

দুই বছরের বেশী সময় পর তারা নিউজিল্যান্ড গেছিলো দেশের বাইরে টেস্ট খেলতে। এই সময়ে আমাদের মুমিনুল, নুরুল হাসান সোহান, রাব্বিদের মতো তরুনরা কী ‘এ’ দলের হয়ে অন্তত চার-পাচটা দেশে লংগার ভার্শন খেলে ফেলতে পারতেন না?

না খেললে কীভাবে হবে?

আপনি কী জানেন, চেতেশ্বর পুজারা রঞ্জিতে কতো রান করে ভারতীয় দলে এসেছেন। পুজারার কথা বাদ দেন, যে করুন নায়ার আগের টেস্টেও ট্রিপল সেঞ্চুরি করে এই টেস্টে দলে নেই, সেই করুন নায়ারের রঞ্জিতে রান কতো জানেন?

খোজ নেন, চমকে যাবেন।

রঞ্জির কোয়ালিটি জানেন?

আচ্ছা, কোয়ালিটির কথা পরে বলি। একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন যে, ভারতীয় পেসারদের অস্বাভাবিক ভালো বোলিং এই টেস্টে? খেয়াল করেছেন যে, তারা রিভার্স সুইং করে পাগল করে দিচ্ছিলেন? অশ্বিন-অশ্বিন করতে করতে অনেকেই এটা আশা করেননি।

কিভাবে হলো?

এবার রঞ্জির কথা বলি। ভারতীয় বোর্ডকে আমরা অনেক নিন্দা করি। কিন্তু নিজের দেশের ক্রিকেটের বেলায় তারা কোয়ালিটিতে একটুকু ছাড় দেয় না। রঞ্জিতে গত পাচ-ছয় বছর ধরে তারা পেস বোলারদের যত্ন নিচ্ছে। সে জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ম্যাচ তারা স্পোর্টিং উইকেটে, এমনকি ঘাসের উইকেটেও খেলাচ্ছে। এ নিয়ে হরভজনের মতো স্পিনার হতাশাও প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ভারতীয় বোর্ড জায়গা থেকে সরেনি।

ফলটা তো চোখের সামনে। এরা নিউজিল্যান্ডে গিয়েও এখন আর আগের মতো খাবি খাবে না।

আর আমরা কী করছি?

রাতদিন বসে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খুজছি, নিজেদের খেলোয়াড়দের বংশনাশ করছি গালি দিয়ে; কিন্তু কাজের কাজ নেই। এনসিএল, বিসিএলে উইকেটটা অবধি ঠিক করা গেলো না এই ১৭ বছরে। এখনও দেশের ক্রিকেট মানেই বাহাতি স্পিনারদের মুড়িমোয়ার মতো উইকেট এবং যার তার ডাবল সেঞ্চুরি।

একটা বল উইকেটে ওঠে না, ম্যাচের প্রথম দিন প্রথম ঘন্টায়ও কোনো একটা বল মুভ করে না। তাসকিন, রাব্বিরা স্বপ্নে বোলিং শিখবে? তামিম-মুমিনুলরা বই পড়ে ফাস্ট বোলিং খেলা শিখবে?

টেস্ট এতো সোজা না রে ভাই।

মুশফিকের পরে অভিষেক হওয়া কোহলি তার দ্বিগুন টেস্ট খেলে ফেলে। খেলতে খেলতেই সে কোহলি হয়। মুশফিককে সমান টেস্ট খেলতে দেন, তারপর কোহলি না হোক, পুজারা-রাহানে খুজবেন।

যতোদিন এসব কাজ না করছেন, ততোদিন ফোসকা পড়বেই। জুতো শোকেসে রাখার জন্য না। ওটা পরেই অভ্যেস করতে হয়

No comments

Theme images by Matt Vince. Powered by Blogger.